জন্মাষ্টমী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে এ উৎসব পালিত হয়। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সনাতন ধর্মের প্রবক্তা ও প্রাণপুরুষ। প্রচলিত বিশ্বাস মতে, দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। হিন্দু সম্প্রদায় আজ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে। ধর্মানুসারে, ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক হলেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে তিনি ঋষিকৃষ্ণ, দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ, দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ, ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ।
ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় খ্রিস্টপূর্ব ৯০০-১০০০ সালে সনাতম ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের অবির্ভাব ঘটে। তার জন্মের সময় এই বিশ্বব্রহ্মা- পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানব জাতিকে রক্ষার জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। আজ সরকারি ছুটি। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে সকলকে সম্মিলিতভাবে সমাজে বিদ্যমান সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সৌহার্দ্য অটুট রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে চরমভাবে বিপর্যস্ত। করোনার কারণে দেশের জনগণের জীবন ও জীবিকা আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।’ তিনি শ্রীকৃষ্ণের দর্শনকে ধারণ করে পরোপকারের মহান ব্রত নিয়ে মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকলের প্রতি আহবান জানান।
দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তি পূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ করোনা ভাইরাস সংক্রমণে বর্তমানে বিশ্ব বিপর্যস্ত। এ প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দুরত্ব মেনে সবাইকে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন- তিনি যেন আমাদের দেশ ও জাতি তথা বিশ্ববাসীকে এই মহামারি হতে মুক্তি দেন। এবারও জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান যথারীতি ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে পালিত হবে এবং জন্মাষ্টমী সংশ্লিষ্ট সকল অনুষ্ঠানমালা মন্দিরাঙ্গনে সীমাবদ্ধ থাকবে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সকল প্রকার সমাবেশ, শোভাযাত্রা বা মিছিল করা থেকে বিরত থাকারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীতে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির উদ্যোগে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় শুরু হয়েছে গীতাযজ্ঞ। দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে অংশ গ্রহণ করবেন। এদিকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) জন্মাষ্টমী উপলক্ষে স্বামীবাগ আশ্রমে ছয়দিন দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এছাড়াও রাজধানীর স্বামী ভোলানন্দ গিরি আশ্রম, প্রভু জগদবন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, রাধামাধব জিও দেব বিগ্রহ মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, রাধা গোবিন্দ জিও ঠাকুর মন্দির, শিব মন্দির, রামসীতা মন্দির ও মাধব গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন মন্দির, পূজামন্ডপ ও ধর্মীয় সংগঠন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।